Planted 33,105 Trees....Mission to plant 1 Lac Trees

Thursday, May 31, 2018

গাছ কেনার জন্য ‘অক্সিজেন ব্যাংক’


২০টি গাছ দিয়ে শুরু হয়েছিল বাগান। এখন সেখানে দুই শর বেশি গাছ। এর মধ্যে ফলের গাছই রয়েছে অনেক। আমের মৌসুম হওয়ায় গাছগুলোয় আম ঝুলতে দেখা গেছে। আটটি আমগাছে ঝুলছে ৩৭টি আম। এর বাইরে হরেক রকমের ফুলের গাছ তো রয়েছে।
রাজধানী ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের (আজিমপুর শাখা) স্কুলের ছাদের ওপর গড়ে উঠেছে এ বাগান। শিক্ষার্থীদের জমানো টিফিনের টাকা থেকে বেড়েছে গাছের সংখ্যা। গাছের পরিচর্যাও চলে তাদের টাকায়।

এ চিত্র শুধু ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নয়, রাজধানীর এমন ২৭টি স্কুলে ছাদবাগান গড়ে উঠেছে শিক্ষার্থীদের যত্ন-ভালোবাসায়।


উদ্যোক্তারা বলছেন, সবুজের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি, গাছের প্রতি মমতা তৈরি আর পরিবেশ বিষয়ে সচেতন করে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই শিক্ষার্থীদের সম্পৃক্ত করে—এমন বাগান গড়ে তোলা হচ্ছে। রাজধানীর স্কুলগুলোতে স্থানসংকটের কারণে ছাদেই গড়ে তোলা হচ্ছে এসব বাগান। বাগান গড়ার কাজে যৌথভাবে সহায়তা করছে পোশাক প্রস্তুতকারী ব্র্যান্ড সেইলর ও পরিবেশবাদী সংগঠন গ্রিন সেভার্স অ্যাসোসিয়েশন।


উদ্যোক্তারা জানান, প্রথম অবস্থায় স্কুলগুলোকে ২০টি করে গাছ দেওয়া হয়। সুদৃশ্য ড্রামে গাছ লাগায় শিক্ষার্থীরা। এমনকি ড্রামটিকে সুন্দরভাবে রং দিয়ে সাজিয়ে তোলেও শিক্ষার্থীরা। যে রং করে ও গাছ লাগায়, তার নাম লেখা থাকে ড্রামটিতে। স্কুলের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নিয়ে গড়ে তোলা হয় একটি কমিটি। ওই কমিটি পরবর্তী সময়ে গাছের পরিচর্যা বা নতুন গাছ কেনার কাজটি করে। গাছ কেনার জন্য ‘অক্সিজেন ব্যাংক’ নামে একটি তহবিল করা হয়। সেই তহবিলে টিফিনের টাকা থেকে বাঁচিয়ে অর্থ জমা করে শিক্ষার্থীরা।

গ্রিন সেভার্স অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, সংগঠনটি ‘সেইলর গ্রিন সেভার্স প্ল্যান্ট ফর প্ল্যানেট’ শিরোনামে বিনা মূল্যে ভিন্নধর্মী বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম শুরু করে। ২০১৫ সালে ঢাকার আজিমপুরে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ছাদবাগান করার মধ্য দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হয়। এখন পর্যন্ত রাজধানীর ২৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাদে বাগান করা হয়েছে। গত ১৩ বছরে ওই সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় দুই হাজার গাছের চারা রোপণ করা হয়েছে। আর এই কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার শিক্ষার্থী ও সাড়ে নয় শ শিক্ষক। ‘অক্সিজেন ব্যাংক’-এর একটি অংশ হচ্ছে বৃক্ষরোপণ, যেটাকে সংগঠনটি ‘প্ল্যান্ট ফর প্ল্যানেট’ বলে।

এ ব্যাপারে গ্রিন সেভার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা আহসান রনি বলেন, বৃক্ষরোপণ রাজধানীর ২৭টি স্কুলে চললেও সারা দেশের ৩৮০টি স্কুলে ‘অক্সিজেন ব্যাংক’ কার্যক্রম চালু রয়েছে। গাছ লাগানোর জন্য সেইলর বিনা মূল্যে ড্রাম সরবরাহ করে থাকে। ঢাকার বাইরের স্কুলগুলোয় ভিন্নভাবে বাগান করে দেওয়া হয়। সেসব স্কুলে জায়গা বিস্তৃত থাকায় স্কুল ভবনের পাশেই বাগান করা হয়। ঢাকার বাইরের স্কুলগুলোর ক্ষেত্রে পরিবেশ অধিদপ্তর ও সেভ দ্য চিলড্রেন সহায়তা করছে।  তিনি বলেন, প্রতি মাসে ছাদবাগান করে দেওয়া স্কুলের সংখ্যা বাড়ছে। ২০২০ সালের মধ্যে ১০০টি স্কুলে ছাদবাগান করে দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে সংগঠনের।


সর্বশেষ ১৯ মে রাজধানীর কদমতলা পূর্ব বাসাবো স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাদে বাগান করে সংগঠনটি। এ ব্যাপারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান ইয়াহিয়া সোহেল প্রথম আলোকে বলেন, ‘উদ্যোগটিকে খুবই ভালো মনে হওয়ায় সংগঠনটির আহ্বানে আমরা সাড়া দিই। তারা ২৫টি গাছ দিয়েছে ছাদবাগানের জন্য। গাছগুলো লাগানোর আগে শিক্ষার্থীরা রং-তুলি দিয়ে ড্রামে রং করে নেয়। এতে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছিল। একটি সেমিনারের মাধ্যমে সংগঠনটির পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের গাছ লাগানোর উপকারিতা ও পরিচর্যা সম্পর্কে জ্ঞান দেওয়া হয়।’
ইয়াহিয়া সোহেল বলেন, ‘ছোটবেলায় আমরা গাছ লাগাতাম। যত্ন করতাম। এখনকার শিশুদের গাছের সঙ্গে পরিচিতি কম। গাছ লাগানোর সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ত করা গেলে তারা পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন হয়ে গড়ে উঠতে পারবে।’
একই মন্তব্য করলেন আজিমপুরে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাতি শাখার ইংরেজির শিক্ষক ও স্কুলের গ্রিন ক্লাবের আহ্বায়ক সাইফুল ইসলাম। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, গাছ লাগানো ও পরিচর্যার অভিজ্ঞতা নিয়ে বের হওয়া শিক্ষার্থীদের অনেকেই প্রশাসনের উচ্চ আসনে বসবে, তাদের হাত দিয়ে পরিবেশবিরোধী কোনো সিদ্ধান্ত আসা সম্ভব নয়। এ ধরনের উদ্যোগের মাধ্যমে পরিবেশবান্ধব প্রজন্ম গড়ে উঠছে। শিক্ষার্থীদের টিফিনের টাকায় গাছগুলো কেনা হয় এবং গাছের পরিচর্যার সঙ্গে তারা যুক্ত থাকে বলে গাছগুলোর প্রতি তাদের ভালোবাসা জন্মে।
সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘গাছ থেকে ফল পাড়ার আনন্দ শহরের এই প্রজন্ম জানে না। অনেক সময় ছাদবাগানে তাদের ফল ছিঁড়ে ফেলাকে প্রশ্রয় দিই। তারা খুবই আনন্দ পায় এতে।’ তিনি জানান, ২০টি গাছ দিয়ে বাগান শুরু করা হয় ছাদে। এখন গাছের সংখ্যা দুই শতাধিক। আম, আমড়া, পেয়ারা, লেবুর পাশাপাশি নয়নতারা, জবা, গোলাপ, গাঁদাসহ নানা ফল-ফুলের গাছ রয়েছে।
স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী আয়েশা সিদ্দিকা প্রথম আলোকে বলে, তারা ৪০০ শিক্ষার্থী কমিটিতে রয়েছে। প্রতি সপ্তাহে গ্রুপ করে তারা গাছের পরিচর্যা করে। গত বছর আগস্ট মাসেও প্রচুর গাছ কেনা হয়েছে সংগঠনের পক্ষ থেকে। এর বাইরে তারা নিজেরাও গাছ কিনেছে।
আয়েশা জানায়, তাদের স্কুল ছাদের বাগান সম্পর্কে জেনে এপ্রিলের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল তা পরিদর্শন করেছে।
স্কুলের দশম শ্রেণির আরেক ছাত্রী তাসনুবা বিনতে ফরাজী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নিজেদের টাকায় গাছগুলো কেনা হয় বলে খুব ভালো লাগে। টিফিনের টাকা থেকে মাঝেমধ্যে ১০ টাকা বাঁচিয়ে গাছ কেনার জন্য আমরা রাখি। বছরে দুই-তিনবার গাছ কেনা হয় সেই টাকায়। মালি আংকেলদের সঙ্গে সবাই মিলে গাছের পোকামাকড় পরিষ্কার করতে ও গাছে পানি দিতেও ভালো লাগে।’
গ্রিন সের্ভাস অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা আহসান রনি বলেন, বাগান করার সময় শিক্ষার্থীদের বোঝানো হয়, পরিবেশকে বসবাসের যোগ্য করে রাখতে হলে সবুজ লাগে। কারও অক্সিজেন প্রয়োজন হলে তাকে হাসপাতাল থেকে টাকা দিয়ে কিনতে হয়। প্রকৃতি মানুষকে বিনা মূল্যে অক্সিজেন দেয়। প্রকৃতির অক্সিজেন পেতে হলে তাই নিজেদেরই তার উদ্যোগ নিতে হবে। গাছ লাগাতে হবে। টিফিনের টাকা থেকে এক টাকা করে অক্সিজেন ব্যাংকের নামে জমা রাখলে তা দিয়ে গাছ কেনা যাবে, অক্সিজেন পাওয়া যাবে।


আহসান রনি বলেন, ‘আমরা এ উদ্যোগে সফল হয়েছি। বাগান করার সঙ্গে যুক্ত শিক্ষার্থীরা গাছগুলোর প্রতি মমতা বোধ করে। সংগঠনের প্ল্যান্টডক্টর নামের অ্যাপের সঙ্গে যুক্ত থেকে অনেক শিক্ষার্থী গাছের কোনো সমস্যা হলে তা জেনে ব্যবস্থা নিতে পারে।’
উৎসাহ জোগাতে বেশিসংখ্যক গাছ লাগিয়েছে—এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পুরস্কৃত করেছে সংগঠনটি। এবার সেরা তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, বিয়াম মডেল স্কুল ও আলী হোসেন গার্লস হাইস্কুল।

source: prothomalo