Pages

Monday, April 9, 2018

ব্যতিক্রমী আমগাছ

আকৃতিটা সুবিশাল। প্রথম দেখায় যে কেউ এটাকে বটগাছ ভেবে ভুল করে বসেন। বটগাছের মতো আকৃতি হলেও আসলে এটি আমগাছ। ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে গাছটি যুগ যুগ ধরে টিকে আছে। 
ঠাকুরগাঁওয়ে দর্শনীয় তেমন কোনো স্থান নেই। কিন্তু প্রত্যন্ত উপজেলা বালিয়াডাঙ্গীর হরিণমারি সীমান্তের মন্ডুমালা গ্রামের এই আমগাছই ঠাকুরগাঁওকে গোটা দেশে পরিচিত করে তুলেছে।

 

ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যের কারণে দেশীয় পর্যটকদের পাশাপাশি বিদেশি অনেকে আসেন আমগাছটি দেখতে। তাঁদের একজন ঢাকায় সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত এইচ ই ক্রিশ্চিয়ান মার্টিন ফোস। তিনি গত বছরের মে মাসে আমগাছটি দেখতে এসেছিলেন। 


জনপ্রিয় একটি আমের জাত সূর্যপুরী। সুস্বাদু, সুগন্ধি, রসাল আর ছোট আঁটি এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সেই সূর্যপুরী জাতের লতানো আমগাছটি দাঁড়িয়ে আছে দুই বিঘার বেশি জায়গাজুড়ে। উচ্চতা আনুমানিক ৮০-৯০ ফুট। মূল গাছটির ঘের ৩৫ ফুটের কম নয়। গাছের তিন দিক থেকে ১৯টি মোটা ডালপালা বেরিয়ে অক্টোপাসের মতো মাটি আঁকড়ে ধরেছে। দূর থেকে মনে হয়, অনেক আমগাছ জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে আছে। বয়সের ভারে ডালপালাগুলো নুয়ে পড়ছে। তবে গাছের শীর্ষভাগে সবুজের সমারোহ। মৌসুমে আম থাকে টইটম্বুর। একেকটির ওজন ২৫০-৩৫০ গ্রাম। অন্যান্য আমের চেয়ে এ আমের চাহিদা ও দাম দুটোই বেশি। 


সরেজমিনে মন্ডুমালা গ্রামে দেখা যায়, ওই আমগাছ দেখতে ভিড় জমিয়েছেন দর্শনার্থীরা। গাছের ডালে ঝুলছে একটি দানবাক্স। পাশে উপজেলা প্রশাসন থেকে দুটি সিমেন্টের বেঞ্চ ও গাছের পাশে একটি টং বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। ক্লান্ত দর্শনার্থীরা বেঞ্চ দুটিতে বসে জিরিয়ে নিচ্ছেন। 


নীলফামারী থেকে আসা শিক্ষক মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিচিত্র এই গাছ সম্পর্কে অনেক গল্প শুনেছি। তখন গাছের বর্ণনা শুনে অবাক হয়েছিলাম। এখানে এসে সেই গল্পের সত্যতা খুঁজে পেয়ে বেশ ভালো লাগছে। তাই গাছের পাশে দাঁড়িয়ে নিজের ছবি তুলে নিয়ে যাচ্ছি।’ 


স্থানীয় মানুষের মতে, এই আমগাছের ইতিহাস অনেক পুরোনো। কেউ বলেন দেড় শ, আবার কেউ আড়াই শ বছর। এলাকার বয়োজ্যেষ্ঠরাও গাছটির বয়স কত, সঠিকভাবে বলতে পারেন না। 

পৈতৃকসূত্রে গাছটির মালিক সাইদুল ইসলাম ও নুর ইসলাম। নুর ইসলাম জানান, গাছটি তাঁর বাবার দাদা লাগিয়েছিলেন। সে কথা জেনেছেন বাবার কাছ থেকে। তিনি বলেন, এই আমগাছের চারা থেকে পাশে কয়েকটি গাছ লাগানো হয়েছিল। তার মধ্যে একটি গাছ এখন মূল গাছটির মতো আকৃতি নিয়েছে। 


যুগ যুগ ধরে রসাল ও সুস্বাদু আম দিয়ে আসছে গাছটি। এ গাছ থেকে প্রতিবছর ১২০ থেকে ১৫০ মণ আম পাওয়া যায়। গত বছর মুকুল আসার পরপরই গাছের মালিকেরা আম ব্যবসায়ীদের কাছে আগাম বেচে দেন ৪০ হাজার টাকায়। 


খ্যাতির কারণে এ গাছের আমের কদর একটু বেশিই। ব্যতিক্রমী গাছের সুস্বাদু আম পেতে আগ্রহী অনেকেই। অন্যান্য গাছের আম যেখানে বিক্রি হয় কেজিপ্রতি ৩০-৪০ টাকায়, ওই গাছের আমের দাম কেজিপ্রতি ১০০ টাকা। 


আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের চাঁপাইনবাবগঞ্জ কার্যালয়ের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. শরফ উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এটি লতা বোম্বাই প্রজাতির একটি সূর্যপুরী আমগাছ। শত বছর ধরে মাটিতে নুয়ে থাকা এমন গাছ সচরাচর দেখা মেলে না। বংশবিস্তার ঘটিয়ে 

বিরল প্রজাতির আমগাছটি শত শত বছর টিকিয়ে রাখা সম্ভব।


Source: Prothomalo

No comments:

Post a Comment