Pages

Tuesday, February 28, 2017

প্রতি বছর অন্তত একটি গাছ লাগাই



প্রাকৃতিক পরিবেশ সুস্থ ও নির্মল রাখতে বৃক্ষের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস, যানবাহন ও কলকারখানা থেকে নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইড প্রতিনিয়ত আমাদের পরিবেশকে দূষিত করছে। গাছ বা বৃক্ষ সে কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং বিনিময়ে অক্সিজেন ত্যাগ করে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ভারসাম্য রক্ষা করছে। একটি গাছ বছরে ১৩ কেজি কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে পরিবেশকে নির্মল করে। আর সোয়া ৬ কেজি বিশুদ্ধ অক্সিজেন বাতাসে ছাড়ে। যা আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অত্যন্ত জরুরি।
 
ক্রমাবনতিশীল পরিবেশ ভারসাম্য, পরিবেশ দূষণ ও জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিহত করে পরিবেশ সুস্থ ও নির্মল রাখতে বৃক্ষের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু দুঃখের বিষয় সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে বৃক্ষের প্রতি আমাদের ঔদাসিন্যের কারণে এ পর্যন্ত মানুষকে নানাভাবে বিপদগ্রস্ত হতে হচ্ছে। মনে রাখতে হবে যে, গাছ আমাদের পরম বন্ধু। গাছ থেকে আমরা ছায়া পাই, ফুল পাই, ফল পাই, আসবাবপত্র, জ্বালানি ও গৃহ নির্মাণের জন্য কাঠ পাই। গাছ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে, পরিবেশ দূষণ ও আবহাওয়ার ভারসাম্য রক্ষা করে, আমাদের বাঁচার জন্য গাছ ভাল আবহাওয়া বজায় রাখে, বৃষ্টিপাত ঘটায়, বাতাসকে সজীব রাখে, তাপ শোষণ করে মরু হাওয়া থেকে দেশকে রক্ষা করে। গাছ কলকারখানার কাঁচামাল হিসেবে, জীব জন্তুর প্রধান আশ্রয় হিসেবে, খাদ্য সংস্থানের প্রধান উত্স এবং রোগ নিরাময় ওষুধ হিসেবে ব্যবহূত হয়। বস্ত্র তৈরির প্রধান উপকরণ তুলা পাই আমরা গাছ থেকে। অনেক গাছের ছাল, পাতা এবং আঁশ থেকে কাপড়, মকার্পেট, দড়ি, চট, ব্যাগ, ওষুধ ইত্যাদি তৈরি হয়। ঘরবাড়ি, কৃষি যন্ত্রপাতি এবং নৌকা তৈরির প্রধান উপকরণ কাঠ। তাছাড়া গাছ পরোক্ষভাবে মাটির উর্বরতা শক্তি বাড়ায়, মাটির গঠন উন্নত করে, ফলে ভূমি ক্ষয়রোধ হয় এবং ভূগর্ভস্থ পানির পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। এক কথায় মানব কল্যাণে গাছের অবদানের শেষ নেই।

আধুনিক সভ্যতায় জনপদ ও নগরীতে বিভিন্ন প্রকার মিল-কারখানা গড়ে উঠেছে। মোটরগাড়ী, রেলগাড়ী, বাস, ট্রাক, স্টীমার ইত্যাদি যানবাহন চলাচল করছে। এরা সর্বদাই বাতাসে কালো ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাস ছাড়ছে। গাছপালা বাতাসের কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে আবহাওয়ার ভারসাম্য রক্ষা ও পরিবেশ দূষণ রোধ করে। যদি গাছপালা না থাকতো তাহলে মিল-কারখানা ও যানবাহনের বিষাক্ত গ্যাসে মানুষ ও জীব-জন্তুর বাঁচার কোন সম্ভাবনা থাকতো না। গাছপালা দ্বারা একটি দেশের আবহাওয়া নিয়ন্ত্রিত হয়। বৃষ্টিপাতের সহায়তা করতেও গাছ অপরিহার্য। স্পঞ্জ যেভাবে পানি ধরে রাখে গাছও সেভাবে মাটির ভিতরের পানিকে ধরে রাখতে সাহায্য করে। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে বৃক্ষের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। একটি পূর্ণ বয়স্ক আম বা কাঁঠাল গাছ গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে ১০০ গ্যালনের মতো পানি প্রস্বেদন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বাতাসে ছেড়ে দেয়। এর ফলে চারপাশের তাপমাত্রা কমে আসে যা এয়ারকুলারে ৪-৫টি ঘরের শীতলকরণের সমান। ঝড়-তুফান, বন্যা-খরা ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসের তাণ্ডব হতে দেশের লোকজন, পশুপাখি ও ঘর-বাড়ি রক্ষা করতে বৃক্ষরাজির অবদান সর্বজন স্বীকৃত। একটি পূর্ণ বয়স্ক আম, জাম বা কাঁঠাল গাছ তার চারপাশে ৭৫ ভাগ বাতাসের বেগ কমাতে সাহায্য করে। আর সে গাছের উচ্চতার ২০ গুণ দূরে ২০ ভাগ গতি কমাতে পারে।

পরিবেশ বিজ্ঞানীদের মতে, কোন দেশের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য তার মোট ভূ-খণ্ডের অন্তত শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা দরকার। কিন্তু বাংলাদেশের মোট বনভূমির পরিমাণ শতকরা ৯ ভাগ মাত্র। দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে দৈনন্দিন জীবনের বিভিন্ন প্রয়োজন মেটাতে ব্যাপকহারে গাছপালা কাটা হচ্ছে। অথচ সে হারে বৃক্ষ রোপণ ও তার রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে না। ফলে জলবায়ুতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। দেশে বন্যা, খরা, ঝড়-ঝঞ্ঝা, আবহাওয়ার উষ্ণতা বৃদ্ধি, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ হরাস, ভূমিক্ষয়, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, উত্তরাঞ্চলে মরু বিস্তারের আশঙ্কা ইত্যাদি বিরূপ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ পরিস্থিতির মোকাবেলায় সত্যিকারের দেশ প্রেমের মনোভাব নিয়ে প্রতিটি নাগরিককে অধিক বৃক্ষরোপণ ও তা সংরক্ষণের দায়িত্বভার হাতে নিতে হবে।

আশার কথা, দেশে বৃক্ষ সম্পদ বৃদ্ধি ও নির্মল পরিবেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে জাতীয়ভাবে বৃক্ষরোপণ ও সংরক্ষণের কমসূচি হাতে নেয়া হয়েছে। কাজেই আসুন, আর দেরী না করে নিজের প্রয়োজন, জাতীয় স্বার্থে ও দেশের কল্যাণে এবং আমাদের অস্তিত্ব রক্ষায় বসতবাড়ির আশেপাশে পতিত জায়গায়, পুকুর পাড়ে, রাস্তার পাশে, খাল, নদীর ধারে, রেললাইন ও বাঁধের পাশে, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস, আদালত, কল-কারখানা, মসজিদ-মন্দির এবং হাসপাতাল প্রাঙ্গণে যেখানেই খালি জায়গা রয়েছে সেখানেই বনজ, ফলদ এবং ঔষধি গাছের চারা বেশি করে লাগাই, তাদের যত্ন করি। এতে একদিকে যেমন দেশ বৃক্ষ সম্পদ বৃদ্ধি পাবে, তেমনি পরিবেশ সুষ্ঠু ও নির্মল হবে।


No comments:

Post a Comment